শবে বরাত সম্পর্কে কোরআন হাদিসের আলোচনা-শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ

আজকের এই আর্টিকেলের মধ্যে আপনি জানতে পারবেন শবে বরাত সম্পর্কে হাদিসে কি বলা হয়েছে, শবে বরাতের রাতে কি কি ইবাদত করতে হবে, শবে বরাত কি ভাগ্য রজনী এছাড়াও আরো জানতে পারবেন শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ নাকি বিদআত এর জন্য আপনাকে পুরো আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়তে হবে।

শবে বরাতের ফজিলত এর গুরুত্ব নিয়ে বর্তমানে আমাদের সমাজে আলোচনা ও সমালোচনা রয়েছে অনেক। কেবলমাত্র কোরআন ও হাদিস সঠিক জ্ঞান এর মাধ্যমে আমাদের মুক্তি দিতে পারে।

ভুমিকা

শবেবরাত মুসলিমদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। তাই আমাদের সঠিকভাবে জানতে হবে শবে বরাত কি, নিজের জন্য কিভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব, শবে বরাতের জন্য কি কি ইবাদত করতে হবে এবং হাদিসে শবে বরাত সম্পর্কে কি বলেছে। নিচের পুরো আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ে শবে বরাত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে নেই।

শবে বরাত সম্পর্কে কোরআন হাদিসের আলোচনা

আরবির ৮ম শা'বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত 'শবে বরাত' নামে পরিচিত 'শব' একটি ফারসি ভাষা যার অর্থ রাত এবং বরাত শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে বলা হয় 'লাইলাতুল বরাত' যার অর্থ সৌভাগ্যের রাত।পবিত্র কোরআন ও শুদ্ধ তাফসীরের আলোকে এই শবে বরাত। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন হা-মীম একটি স্পষ্ট কিতাবের শপথ।

নিশ্চয়ই আমি এটি একটি বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আমি নিশ্চয়ই সতর্ককারী। হিকমতের কাজ এই রাতেই বন্টন করে দেওয়া হয় সবাইকে ( সূরা দুখান, আয়াত নং ১-৪ )। ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিসরা বলেছেন ৪৪৮ হিজরির বায়তুল মুকাদ্দাসে সর্বপ্রথম এ রাতে এই পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন শুরু হয়ে ছিল।

তবে মুফাসসিরগণ কুরআন শরীফের একটি আয়াতের ব্যাখ্যায় শবে বরাত সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন আমি তো শবে বরাত অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরিকৃত করা হয় শবে বরাতের রাতে। অনেক মুফাসসির শবে বরাতকে শবে কদরের সাথে তুলনা করেছেন। শবে বরাত সম্পর্কে হাদিসে অনেক আলোচনা বিদ্যমান রয়েছে।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সা.)এরশাদ করেছেন-তোমরা শাবান মাসের চাঁদের হিসাব রাখো রমজান মাসের জন্য। নবী করিম ( সা.) রমজান মাসের রোজা ব্যতীত শাবান মাসে অধিক রোজা রাখতেন, যা অন্য মাসে ততো অধিক রোজা রাখতেন না। এই জন্য শাবান মাসকে নিজের সাথে তুলনা করেছেন নবী করিম ( সা.)।

আবু মুসা আশআরি ( রা.) বলেন- নবী করিম ( সা.) বলেছেন মহান আল্লাহ তা'আলা শবে বরাতের রাতে তার সকল সৃষ্টির দৃষ্টিপাত করেন এবং সকলকে ক্ষমা করে দেন মুশরিক ও বিব্দেসষ পোষণকারী ব্যতীত।আবু সালাবা আল-খুশানি ( রা.)বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যখন শবে বরাতের রাত আসে তখন আল্লাহ তা'আলা তার সকল সৃষ্টির জীবের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন।

অতঃপর ঈমানদারগণকে মার্জনা করেন। আর পার ওশ্রী কাত্যরতায় ও হিংসা-বিদ্বেষে লিপ্ত কারীদের কে তাদের নিজেদের অবস্থায় ছেড়ে দেন।হযরত আয়শা ( রা.)বলেন- আল্লাহ তাআলা শবেবরাতে চলতি বছরের জন্ম গ্রহণকারী আদম সন্তানের নাম এবং চলতি বছরে মৃত্যুবরণকারী আদম সন্তানদের নাম লিখে রাখেন। এই রাতে আদম সন্তানের রিযিক অবতীর্ণ করা হয় এবং আদম সন্তানদের আমল উঠিয়ে নেওয়া হয়।

শবে বরাতের ফজিলত

আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রজনীকে 'লাইলাতুল মীন নিসফি' বলা হয়েছে। মুসলিম উম্মতের কাছে এই রাত শবেবরাত বা লাইলাতুল বরাত নামে পরিচিত। তবে এটি সঠিক হোক আর না হোক এই দিন মুসলিম উম্মতেরা বিভিন্ন রুসুম রেওয়াজে মেতে উঠেন। বিশ্ব নবীর এক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে এ রাতের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি।

শবে বরাতের এই রাতে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপনকারী ( মুশরিক ) ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সকল ক্ষমা প্রার্থীকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস অনুযায়ী শবেবরাতের গুরুত্ব অত্যাধিক। তবে এই ব্যাপারে কোরআন শরীফে কোন আয়াত না থাকায় শবে বরাতের রাতে ইবাদতের ব্যাপারে মসজিদে গিয়ে রুসুম রেওয়াজ পালন সহ কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করা যেমন ঠিক নয়।

ঠিক তেমনি ভাবে এই রাতের কোন ইবাদত-আমল করা যাবে না বলে অবহেলা করাও ঠিক হবে না। ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা প্রদান করেছে মানুষকে ইসলাম। তাই সহিহ হাদিস মোতাবেক সঠিকভাবে শবে বরাত এর দিবাগত রজনীতে ইবাদত-বন্দেগীতে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে হবে।হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন- আল্লাহ তা'আলা শবেবরাতের রাতে সৃষ্টির দিকে তার রহমতের দৃষ্টি দেন এবং হিংসা-বিদ্বেষ ও মুশরিক ব্যতীত সকল ক্ষমাপ্রার্থীকে তিনি ক্ষমা করে দেন।

শবে বরাতের ইবাদত কি কি

  • ১. দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে
  • ২. কোরআন তেলাওয়াত করা
  • নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ পড়া
  • ইস্তেকফার পড়া বা ক্ষমাপ্রার্থনা করা
  • একনিষ্ঠ মনে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করা
  • রাতের কিছু সময় ঘুমানো এমন যেন না হয় যে সারারাতের দীর্ঘ ইবাদতের কারণে ক্লান্তিতে ফজরের নামাজের জামাত ছুটে যায়
  • 7.পরেরদিন রোজা পালন করা
হযরত আলী ইবনে আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন শবে বরাতের রাত যখন আসে তোমরা তখন এই রাতটি ইবাদত বন্দেগী করে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কারণ এই রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তা'আলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন আমি তাকে ক্ষমা করে দেব যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে।

আমি তাকে রিযিক দেব যে আমার কাছে রিজিক প্রার্থনা করবে। এভাবে আল্লাহ তায়ালা ডাকতে থাকেন সুবহে সাদিক পর্যন্ত। তবে বর্তমান সমাজে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের রেওয়াজ তথা রুটি -হালুয়া, খিচুড়ি-শিরনি, মিষ্টি, মসজিদ সাজানোর প্রথা চালু রয়েছে। তা থেকে বিরত থাকতে হবে তবে শবে বরাত উপলক্ষ না করে ফকির-মিসকিনদেরকে সওয়াবের নিয়তে হালুয়া রুটি বা খাবার দাবার অর্থ করি বিতরণ করতে নিষেধ বাধা নেই।

বিশেষ করে প্রিয় নবী ( সাঃ) শেখানো দোয়াটি বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করাও উম্মতে মুহাম্মাদির কর্তব্য।اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ উচ্চারণ- আল্লাহুম্মা বারিকলানা-ফি শাবান ওয়াবাল্লিগনা রামাদান।অর্থ হে আল্লাহ তুমি আমাদের জন্য সাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।

আমাদেরকে তুমি নেক হায়াত দান করো যাতে আমরা রমজান মাসের বরকত লাভ করতে পারি।

শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ

বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, লেবানন, ইরান, পাকিস্তান, আজারবাইজান, তুরস্ক, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও কাজাকিস্তান-এ শবে বরাত উদযাপিত হয়। আরব দেশে শবেবরাত পালন করে না তাদের মতে এই রাতে বিশেষ কোনো ইবাদতের নির্দেশ নেই। তবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন শবে বরাতের রাত গুরুত্বপূর্ণ রাত।

এই রাতের ইবাদত বন্দেগী কবুল হয়। এবং এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার সৃষ্টির সকল প্রাণীদের ওপর নজর দেন হিংসা-বিদেশী ব্যতিত সকলকে তিনি এই রাতে ক্ষমা করে দেন। আরো বলেছেন শবে বরাতের রাতে আদম আলাই সাল্লাম এর উম্মতের হেদায়েত এবং রিজিক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলার কাছে রিজিক প্রার্থনাকারীদের রিজিক দেন দোয়ার মাধ্যমে এবং হেদায়েত প্রার্থনা কারীদের হেদায়েত দেন।

 তবে এই শবে বরাত কে নিয়ে বেশি উল্লাসিত হওয়া যাবে না আবার এটিকে একেবারে অবহেলা করা যাবে না।

ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাত

হাদিস দ্বারা প্রমাণিত শবেবরাতের রাতে ইবাদত বন্দেগী করা নির্ভরযোগ্য। ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে শবে বরাতের নফল ইবাদত। শবে বরাত শব্দটি ফারসি ভাষার হওয়ার কারণে কুরআন হাদিসে তেমন নেই। তবে লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান বা শাবান মাসের মধ্যরাত আরবীতে হাদিসে বর্ণনা করা আছে যার অর্থ শবে বরাত।

বর্তমানে এক শ্রেণীর লোক বাংলা হাদিস পড়ে জ্ঞান অর্জন করছে কিন্তু কুরআন ও সহিহ হাদিসের আবশ্যিক কোন জ্ঞান তাদের মধ্যে নেই তারা বাংলা হাদিস গবেষণার মাধ্যমে ইসলামের সুপ্রমাণিত বিষয়গুলোকে জনসাধারণের মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। তারা বাংলা হাদিস থেকে জ্ঞান অর্জন করে বলছে শবে বরাতের এই ইবাদত করা বিদআত, ইত্যাদি।

হাদিস সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক হয় সেই ব্যক্তি যে শবে বরাতের সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পরও এটিকে বিদআত বলে। আর যে ব্যক্তি শবে বরাত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে এই ব্যাপারে সঠিক জানার পরও শবে বরাতকে বিদআত বলে সেই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর হাদিস অস্বীকারের মত মারাত্মক অপরাধে অপরাধী।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে আল কুরআনে শবে বরাতের অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে কোরআনের কোথাও শবেবরাত পরোক্ষভাবে বা প্রত্যক্ষভাবে উল্লেখ নেই। কিন্তু শাবান মাসের মধ্যরাতের ইবাদত সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে এছাড়াও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন শবে বরাতের রাতটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় রাত।

শেষ কথা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আশা করি আমি আপনাকে শবে বরাত সম্পর্কে অনেক কিছু বিস্তারিত জানাতে পেরেছি সুতরাং আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এটি আপনার বন্ধু এবং আত্মীয়দের মধ্যে শেয়ার করবেন। এবং অন্য কোন বিষয়ে জানার থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url