গরুর মাংসের অপকারিতা-গরুর মাংসে কি এলার্জি আছে
গরুর মাংস খাওয়ার অপকারিতা কি কি এবং গরুর মাংস খেলে কি কি সমস্যা হয়। গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে যদি কোন প্রশ্নের উত্তর জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।সঠিক নিয়ম মেনে গরুর মাংস খেলে ক্ষতির কোন ঝুঁকি থাকে না। গরুর মাংস কি এলার্জি আছে এই সকল বিষয় নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আজকের এই পুরো আর্টিকেল জুড়ে গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এছাড়াও আরো বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং একজন সুস্থ মানুষের জন্য কতটুকু গরুর মাংস খাওয়া প্রয়োজন এই বিষয় নিয়ে জানতে পুরো আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন।
ভূমিকা
গরুর মাংস খাওয়ার ফলে যেমন ক্ষতি হয় তেমনি গরুর মাংস খাওয়ার ফলে অনেক উপকার ও হয়। গরুর মাংস থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায় এছাড়াও অনেক ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে । যদিও অনেক ডাক্তার গরুর মাংস খেতে নিষেধ করেন।চর্বি ছাড়া পরিমাণ মতো গরুর মাংস খেলে কোন ক্ষতি হয় না।
গরুর মাংসের উপকারিতা
পুষ্টিবিদরা বলেছেন গরুর মাংসে যেমন ক্ষতিকর দিক রয়েছে তেমনি গরুর মাংস খাওয়ার ফলে অনেক উপকারও রয়েছে। এখন আপনার গরুর মাংস খাওয়ার ফলে উপকার হবে না অপকার হবে সেটা নির্ভর করবে আপনার মাংস খাওয়ার উপরে। শরীরের জন্য গরুর মাংসে আছে কয়েকটি পুষ্টি উপাদান।
সেগুলো হলো নায়াসিন, ভিটামিন বি ৬, স্যালিনিয়াম, প্রোটিন, আয়রন, জিংক, ভিটামিন বি১২ ইত্যাদি। গরুর মাংস খাওয়ার কিছু উপকার দিক গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়ক নিয়ম করে গরুর মাংস খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের শারীরিক বৃদ্ধি, রক্তবর্ধন, বুদ্ধি বৃদ্ধি গঠনে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ৮৫ গ্রাম গরুর মাংসে দৈনিক চাহিদার ১২০ শতাংশ ভিটামিন বি ১২, ৩২ শতাংশ আয়রন, ৪২ শতাংশ সেলিনিয়াম,৭৬ শতাংশ জিংক, ৩৩ শতাংশ ভিটামিন বি ৬, ১৮ শতাংশ ফসফরাস ৮৫শতাংশ প্রোটিন থাকে।
খনিজের অভাব দূর করে গরুর মাংস শরীরে খনিজের অভাবে সৃষ্টকৃত অসুখ-বিসুখ দূর করে। কারণ খনিজ লবণের দুর্দান্ত উৎস গরুর মাংস। প্রোটিন, জিংক, আয়রন, সেলিনিয়াম, ফসফরাস থাকে গরুর মাংসে। গরুর মাংস শরীরের ভিটামিন এর অভাব মিটানোর গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
প্রোটিনের উৎস প্রোটিনের সব থেকে ভালো উৎস গরুর মাংস। মাংস ছাড়াও গরুর আর কলিজা মগজ ইত্যাদি থেকে মেলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। হাড় ও মাংস বেশি ভালো রাখতে প্রোটিন থেকে পাওয়া এমাইনো এসিড কাজে লাগে। ২২. ৮ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় ১০০ গ্রাম গরুর মাংস থেকে।
জিংকের ঘাটতি দূর করে জিংক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমাদের সুস্থ থাকার জন্য। জিংক আমাদের শরীরের কোষগুলো ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দৈনিক ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খাওয়ার ফলে শরীরের দৈনিক জিংকের ৩৯ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে।
আরো পরুন- খালি পেটে আপেল খেলে কি হয়-আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা
গরুর মাংসে কি এলার্জি আছে
মাংসে কি এলার্জি আছে এই প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানতে পারবেন এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে। গরুর মাংসে অন্যান্য ভিটামিন পুষ্টি ও প্রোটিনের চাহিদা মেটালেও গরুর মাংসে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়। যাদের শরীরে কোলেস্টেরল সমস্যা রয়েছে তাদের শরীরে এটি বেশি দেখা দেয়। এছাড়াও যাদের শরীরে কোলেস্টেরল রয়েছে তাদেরকে ডাক্তার গরুর মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
গরুর মাংসে থাকা চোর্বি-ফ্যাট মানবদেহে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। এছাড়াও প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধ বয়স্কদের শরীরে গরুর মাংস খাওয়ার ফলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। গরুর মাংস না খাওয়ার ফলেও যাদের শরীরে নরমালি এলার্জি সমস্যা হয় তাদের গরুর মাংস না খাওয়াই ভালো। গরুর মাংস খাওয়ার পর নিচে উল্লেখিত অন্যতম লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার শরীরে গরুর মাংস খাওয়ার ফলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিয়েছে। লক্ষণগুলো হলো-
- পেট ব্যথা ও বধ হজম হওয়া
- নাক বন্ধ হওয়ার
- মাথা ব্যথা করা
- ত্বকের রেশ বা ফুসকুড়ি
- শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকানো
- বমি বমি ভাব হওয়া
- শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে যাওয়া
এইসব লক্ষণ গুলো দেখা দিলে গরুর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ গরুর মাংস খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে এলার্জির সমস্যা হয়েছে।
গরুর মাংসের অপকারিতা
একটি সুস্থ মানুষ দৈনিক ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খেতে পারবেন। দৈনিক ৮৫ গ্রাম চর্বি ছাড়া গরুর মাংস খেলে আপনার শরীরের ১০ শতাংশ ক্যালরির চাহিদা পূরণ করবে। গরুর মাংসের অপকারিতা গুলো হলো-
কোষ্ঠকাঠিন্যার ঝুঁকি বাড়ায়- অন্যান্য মাংসের থেকে গরুর মাংসের স্বাদ বেশি হওয়ার কারণে অনেকে এটি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। এতে কষ্টকাঠিন্যর ঝুঁকি বাড়ে। এর ফলে পরবর্তীতে আরো বড় ধরনের অসুখ দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি গরুর মাংসের সাথে মিলিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেই অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যাবে।
কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি- পরিমাণে থেকে বেশি গরুর মাংস খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। তাই গরুর মাংস খেতে যতই ভালো লাগুক সেটি পরিমাণ মতোই খেতে হবে। কোলন ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বারে সপ্তাহে পাঁচ বেলা গরুর মাংস,খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস খাওয়ার ফলে। অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়ার ফলে মৃত্যুও হতে পারে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি- গরুর মাংস খাওয়ার ফলে শরীরের উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে আপনি হয়তো এই বিষয়টি জেনে থাকবেন। কারণ গরুর মাংসে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে অনেক ক্ষতি করে। সোডিয়াম রক্তচাপ সৃষ্টিতে বা রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে গরুর মাংস খাওয়ার ফলে। এরপর সেখান থেকে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
গরুর মাংস কতটুকু খাবেন?
গরুর মাংস খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে ধারণা পেতে পেতে আমাদের মনে এক দুশ্চিন্তা কাজ করে যে গরুর মাংস খেলে কোন উপকার নেই। সঠিকভাবে পরিমাণমতো গরুর মাংস খেলে যে পরিমাণ পুষ্টি বা প্রোটিন পাওয়া যায় তা অন্যান্য খাবার থেকে পাওয়া যায় না। একজন মানুষের দৈনিক ৮৫গ্রাম নিরাপদ মাত্রায় গরুর মাংস খাওয়া উচিত।
প্রতিদিন চর্বি ছাড়া ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খান তাহলে আপনার ক্যালোরির দৈনিক চাহিদার ১০% ক্যালরি আসবে।
লেখকের কথা আজকে এই পুরো আর্টিকেল জুড়ে গরুর মাংস খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে পরিমান মতো আপনি গরুর মাংস খাবেন। আজকের এই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হন তাহলে এই পোস্টটি আপনি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url