কলা গাছের ভিতরের অংশের উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা

 কলা গাছের ভিতরের অংশের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন। এছাড়াও এই আর্টিকেলটির মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে খালি পেটে কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। মানবদেহের জন্য কলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল।



আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানাতে চাই কিভাবে কলা চাষ করতে হয়, দুধ কলা খাওয়ার উপকারিতা কি এবং কলা গাছের পাতা ও কলাগাছের উপকারিতা সম্পর্কে। এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সমস্ত আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন।

ভূমিকা

বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল কলা যা সারা বছর পাওয়া যায়। কদলী বলা হতো প্রাচীন সাহিত্যে কলাকে। কলা গাছের কলাপাতা, কলা গাছের শিকড়, এবং কলা সবই উপকারী। কলাগাছ এবং কলাপাতা শুধুমাত্র পশুর খাদ্য নাই। এদের আছে আশ্চর্যজনক ঔষধি গুণ। কলাগাছ ও কলাপাতা রোগ নিরাময়ে অদ্বিতীয়। কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কলা চাষ পদ্ধতি জানা উচিত। নিচে কলা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা

বর্তমানে অফিস কিংবা ক্লাসের জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই খালি পেটে অনেকের কলা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। কিন্তু খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত কিনা সেটা জানা নাই অনেকের। এর ফলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। কলার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। তাই সকাল বেলা খালি পেটে কলা খাওয়ার কারণে এই চিনি সরাসরি শরীরে কাজ করা শুরু করে এর ফলে সাথে সাথে অনেক এনার্জি পাওয়া যায়।

কিন্তু এই এনার্জি সারাদিন থাকে না কিছুক্ষণ পর থেকে চলে যায় যার ফলে ক্লান্তি ভাব আসে। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালের নাস্তায় কলা একটি চমৎকার খাদ্য। সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতার দিকগুলো হলো-

  • সকালে কলা খাওয়ার ফলে শরীরের শক্তির যোগান দেয়। কলার মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তির দ্রুত উৎস।
  • কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। পটাশিয়াম হল অন্যতম একটি জরুরি উপাদান যা আমাদের হাট ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন। তাই আমাদের খাবারের তালিকায় প্রতিদিন একটি করে কলা রাখা উচিত।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কলার মধ্যে থাকা ফাইবার সাহায্য করে।
  • কলার মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি ৬। এই ভিটামিন টি শরীরের বিভিন্ন কাজের জন্য অপরিহার্য। শরীরের লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে ভূমিকা রাখে ভিটামিন বি৬।
  • কলা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারণ কলার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে।

দুধ কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা খাওয়া এবং দুধ পান করার উপকার সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা আছে। তবে দুধ কলা একসাথে খাওয়ার ফলে এর উপকার আরো বেড়ে যায়। এটিকে দুধ-কলা ডায়েট বলা হয়। চলুন জানা যাক দুধ কলা খাওয়ার উপকারিতা কি কি-

  • ক্যালরি এই খাবারটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। প্রতিদিন একজন মানুষের জন্য সাধারণত তিনটি কলা ও এক কাপ ফ্যাট মুক্ত দুধ খেতে হয়। কলা ও দুধ আগে ও পরে খাওয়া যায়। এটি আমাদের ত্বক মসৃণ করে। তবে এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হয়। এই খাবার দ্বারা প্রতিদিন আমরা এক হাজারের মতো ক্যালরি পেয়ে থাকি।
  • দাঁত ও ত্বকের যত্ন দুধ কলা ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল করে। ব্রণের কালো চিহ্ন দূর করে। দাঁত ভালো রাখতে ও দাঁত সাদা করতে এটি খুবই কার্যকরি। এটি আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
  • কলা পুষ্টিতে ভরপুর কলায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে খনির পটাশিয়াম জিংক আয়রন থাকে যা ত্বকের জন্য অনেক কার্যকরী ।
  • দুধের গুণ দুধের মধ্যে চর্বির মাত্রা থাকে না। তাই দুধ কোলেস্টেরল কমাতে খুবই উত্তম খাবার। ফ্যাটমুক্ত দুধে চর্বি ছাড়া বাকি উপাদান গুলো পরিমাণ মতো থাকে। মাংসপেশী মজবুত করে দুধের প্রোটিন।
  • যদি দুধ কলা একসাথে খাওয়া হয় তাহলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবার অথবা খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। এই খাবার একবার খেলে তিন চার দিনের শক্তির যোগান দেয়।

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের সতর্কতায় পারে একজন সুস্থ সবল স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দিতে। গর্ভাবস্থায় মায়েদের অনেক কিছু ভেসে খেতে হয়। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের খাবার তার শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক খাবার রয়েছে যা গর্ভবতী নারীদের সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলতে হবে।

তাই গর্ভাবস্থায় নারীদের খাওয়া-দাওয়া নিয়ম মেনে করা উচিত। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়াই মা ও সন্তান উভয়ের জন্য উপকারী। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকার গুলো হলো-
  • পুষ্টি উপাদানে পূর্ণ গলায় বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। কলার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে ডায়েটারি ভাইভা ও রয়েছে। যা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন।
  • মর্নিং সিকনেস কমাতে সাহায্য করে কলা খেলে পেট ভালো থাকে ও শরীর ভালো থাকে। কলা খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব কমে যায়। অনেক ডাক্তার বলেছেন গর্ভবতী নারীরা সকালে একটি করে কলা খেলে তার ফলে তাদের মর্নিং সিকনেস কমাতে সাহায্য করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো করে গলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য সারতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য যাদের আছে, তাদের উচিত প্রতিদিন এক থেকে দুইটি কলা খাওয়া।
  • বুকের জ্বালা কমাতে সাহায্য করে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড বলা হয় কলা কে। তাই কলা খাওয়ার ফলে বুক জ্বলা কমে যায় বা বুক জ্বলা কমাতে সাহায্য করে। এটি একটি হজমের ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।
  • ওজন বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে কলার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ক্যালরি থাকে। তাই কলা খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি আটকাতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়ম মেনে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন এবং এর পাশাপাশি কলা খাওয়াও প্রয়োজন।
  • শিশুর জন্মগত ত্রুটির সম্ভাবনা হ্রাস করে ফোলেটের একটি ভালো উৎস কলা। যা শিশুর মেরুদন্ড ও মস্তিষ্কে বিকাশ এর জন্য কলা খুবই প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার কারণে শরীরে ফলেটের মাত্রা উন্নত হয়।

কলা চাষ কিভাবে করবেন

কলা চাষ পদ্ধতি সঠিকভাবে জেনে নিন-

মাটি তৈরি পর্যাপ্ত রোধ যুক্ত ও পানি না জমে থাকে এমন সুবিধাজক্ত উঁচু জমিতে কলা চাষ করা উচিত। কলা চাষের জন্য উর্বর ও দোআঁশ মাটি প্রয়োজন। ভালোভাবে চাষ করে মুই দিয়ে জমি আগাছা মুক্ত ও সমতল করে নিতে হবে।

চারা রোপন বছরে ৩ সময় কলার চারা রোপন করা যায়। প্রথম রোপন কাল আশ্বিন-কার্তিক সবথেকে ভালো সময়। দ্বিতীয় রোপন করা মাঘ-ফাগুন ভালো সময়। তৃতীয় ধাপ চৈত্র-বৈশাখ এ সময় মোটামুটি ভালো।

চারার দূরত্ব সাড়ি থেকে সাড়ির দূরত্ব ২ মিটার এবং কলাগাছের চারা থেকে চারার দূরত্ব ২ মিটার।
গর্ত তৈরি কলাগাছের চারা রোপনের একমাস আগে থেকেই গর্ত তৈরি করে রাখা উচিত। গর্তের আকার হবে ৬৫ সেন্টিমিটার চওড়া ও ৬৫ সেন্টিমিটার গভীর। গর্ত তৈরি হয়ে গেলে গর্তের মধ্যে জৈব সার ও টিএসপি সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরে রাখতে হবে।

চারা রোপন কলা গাছের চারা রোপনের জন্য অসী তেউড় উত্তম। অসি তেউড়রের পাতা সরু এবং অনেকটা তলোয়ারের মতো গুড়ি বড় এবং শক্তিশালী হয়। তিন মাস বয়স কত বয়স্ক সুস্থ সবলতেউর রোগমুক্ত গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়।

সার প্রয়োগ জমি তৈরি করার সময় অর্ধেক জৈব সার দিতে হবে এবং বাকি অর্ধেক গর্ত করার পরে গর্তের মধ্যে দিতে হবে। চারা রোপনের দুই মাস পর চার ভাগের এক ভাগ ইউরিয়া অর্ধেকএমপি বাকি টিএসপি জমিতে ভালোভাবে ছিটিয়ে কুপিয়ে মাটির সঙ্গে তা মিশিয়ে দিতে হবে। এর দুই মাস পরে গাছ প্রতি বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। কলা গাছের মচা বের হওয়ার সময় বাকি চারভাগের একভাগ ইউরিয়া জমিতে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

পরিচর্যা কলাগাছের চারা রোপনের সময় জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে তখনই তা সেচ দিয়ে নিতে হবে। এছাড়াও শুকনো মৌসুমে ২০ থেকে ২৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। এবং বর্ষার সময় যেন জমিতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মচা বের হওয়ার সময় প্রত্যেক গাছে একটি তেওড় বাড়তে দেওয়া ভালো।

কলা গাছের ভিতরের অংশের উপকারিতা

কলা গাছের ভেতরের অংশকে থোড় বলা হয়। থোরের উপকার সম্পর্কে জানলে আপনিও অবাক হবেন। কলা গাছের ভেতরের অংশের উপকারিতা গুলো হলো-
  • কলা গাছের থড়ের রস শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সাহায্য করে।
  • থড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার থাকার কারণে শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • পুষ্টিগুণে ভরপুর থড়।
  • থড় টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
  • কলার কাণ্ডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে।
  • হজম প্রক্রিয়া সচল রাখে। কিডনি স্টোন এবং ইউটিআই সমস্যার সমাধানে মূল ভূমিকা রাখে।
লেখকের মন্তব্য কলা অনেকের পছন্দের একটি খাবার। কলা আমাদের মানব দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। কলা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও আমাদের শরীরকে মোটা হওয়া থেকে রক্ষা করে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে কলার খাওয়ার ফলে কি কি উপকার ও অপকার হয় এবং গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পেরেছেন। আজকের এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করুন। আরও ভালো ভালো পোস্ট পড়তে কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url