মসজিদে দান করার ফজিলত কি-মসজিদের আদব কয়টি
মজিদ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থান। মসজিদ হলো মহান আল্লাহ তাআলার ঘর। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন মসজিদে দান করার ফজিলত কি, মসজিদের আদব কয়টি এসব সম্পর্কে জানতে পারবেন এছাড়া আরও জানতে পারবেন মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস ও কুরআনে কি বলা হয়েছে।
এই আর্টিকেলটি পুরো পড়ার মাধ্যমে আপনি আরো জানতে পারবেন মসজিদে কি কি আদব মেনে প্রবেশ ও দোয়া পড়ে প্রবেশ করতে হয় এবং মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া কি সকল বিষয়ে আপনি জানতে পারবেন
ভূমিকা
মসজিদ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে উত্তম স্থান। মসজিদ নির্মাণ ও মসজিদে দান করার ফজিলত অনেক। মসজিদে কিভাবে দান করতে হবে, কোন সময়ে ১ টাকা দান করলে ৭০ টাকা দান করার সব পাওয়া যাব্ মসজিদে কি কি আদব, কি কি নিয়ম ও সুন্নাত মেনে বসে থাকতে হবে এ সকল বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
মসজিদে দান করার ফজিলত কি
মসজিদে দান করার ফজিলত অপরিসীম। মসজিদে দান করাকে আল্লাহ তা'আলা মসজিদের আবাদ করাকে বুঝিয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যদি কোন ব্যক্তি একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেয় তাহলে আল্লাহ তাআলার তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। মসজিদে দান করার আমলের ধারা মৃত্যুর পরও চলমান থাকবে।
রমজান মাসে ১ টাকা দান করলে ৭০ টাকা দান করার সমান সওয়াব আল্লাহ তায়ালা দিয়ে থাকেন। অতএব রমজান মাসে দান করার সোয়াব অনেক বেশি। লোক দেখানো দান করা আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না এমন ভাবে দান করতে হবে যেন এক হাতে দান করলে অন্য হাত বুঝতে না পারে। গোপনে মসজিদে দান করার ফজিলত অনেক বেশি।
মসজিদের দান বাক্সে দিনে কাউকে না দেখিয়ে এবং রাতে গোপনে দান করলে আল্লাহ তা'আলা খুশি হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ সাহাবীদের যখন মসজিদ নির্মাণ ও মসজিদে দান করার ব্যাপারে বিভিন্ন হাদিস বর্ণনা করতেন তখন সাহাবীরা মসজিদে দান ও মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হতেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর দান করা বেপারের হাদিস শুনে সাহাবায় কেরামগণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অনেক মসজিদ নির্মাণ করেছেন।
মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস ও কুরআন
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থান হচ্ছে মসজিদ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হল মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা হচ্ছে বাজার। একটি মসজিদ নির্মাণের সওয়াব মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে।আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণ ও মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণকারীদের আল্লাহ তা'আলা ভীষণ পছন্দ করেন।
মসজিদে দান এবং মসজিদ নির্মাণ করাকে মসজিদের আবাদ বলা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন তারাই তো মসজিদের আবাদ করবে যারা ঈমান আনে, আল্লাহর শেষ দিনকে বিশ্বাস, করে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়, আখিরাত কে বিশ্বাস, করে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করেনা।হাদিস শরীফে বর্ণনা হয়েছে যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে এর ফলস্বরূপ আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করে দিবেন। আর ওই স্বাদ হয়েছে এই আমলের প্রতিদান মৃত্যুর পরও কবরে জারি থাকবে
মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া
মসজিদ হলো আল্লাহ তাআলার ঘর। দুনিয়ার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জায়গা ও উত্তম জায়গা হচ্ছে মসজিদ। আল্লাহর মনোনীত ঘর হচ্ছে মসজিদ। যেখানে বান্দারা মহান আল্লাহ তাআলার কুদরতি পায়ে সিজদাবনত হয়। মসজিদে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য কিছু আদব এবং কিছু সুন্নাত দুয়া রয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আদবের সঙ্গে মসজিদে প্রবেশ করতেন এবং আদেশের সহিতমসজিদ থেকে বের হতেন।
একই সঙ্গে মসজিদে প্রবেশের দোয়া এবং মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া পড়তেন। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমাদের মধ্যে যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন যেন সে দোয়া বলে প্রবেশ করে দোয়াটি হল-
اَلّلهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَاب رَحْمَتِكَ উচ্চারণ- 'আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা বিরাহমাতিকা।' অর্থ- হে আল্লাহ আপনি আমার সকল গুনহা গুলোকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা খুলে দিন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন তোমাদের মধ্যে যখন কেউ মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় যেন এই দোয়াটি পড়ে, দোয়াটি হল-
اَللهُمَّ اِنِّىْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ উচ্চারণ- 'আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা।' অর্থ হে আল্লাহ আমি আপনার কল্যাণ চাই মসজিদে প্রবেশ করার সময় এবং মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়ার ফলে শয়তান মুসল্লির উপর কুমন্ত্রণা ও প্রচারণা দিতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে মুসলমান মসজিদে সুন্দর ভাবে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করতে পারে এবং আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও পরকালের চাওয়া পাওয়ায় ধন্য হয়।
সকল মুসলিমদের উচিত মসজিদে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় হাদিসের সকল দিকনির্দেশনা যথাযথ পালন করা।
মসজিদে প্রবেশের সুন্নত ও নিয়ম
মসজিদ হল আল্লাহর ঘর। মসজিদে প্রবেশ করতে হলে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সুন্নত মেনে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে এবংএগুলোর উপর যত্নশীল হওয়া আবশ্যক। কারণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ সুন্নত অনুসরনকারীদেরকে জান্নাতের অধিবাসী বলে সুসংবাদ দিয়েছেন। মসজিদে প্রবেশ করার সময় যেসব মেনে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে তা হলো-
- চোখ নিচু করে আল্লাহ তাআলার প্রতি ভয় রেখে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে।
- মসজিদে প্রবেশ করার সময় জুতাগুলো খুলে নিতে হবে. জুতা ভিতরে নিতে হলে অবশ্যই তা বাহিরে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- জুতা খোলার সময় বাম পায়ের জুতা আগে খুলতে হবে এরপরে ডান পায়ের জুতা খুলতে হবে
- মসজিদে প্রবেশ করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবে।
- মসজিদে প্রবেশের সময় প্রথমে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।
- মসজিদে প্রবেশ করার সময় মসজিদে প্রবেশ করার দোয়া পড়তে হবে।
মসজিদের আদব কয়টি
পৃথিবীর মধ্যে সর্বোত্তম স্থান হল মসজিদ। মসজিদ হল আল্লাহর ঘর। এই ঘরে মুসল্লিরা নামাজ সহ বিভিন্ন ইবাদতে মগ্ন থাকেন। আল্লাহর ঘর মসজিদকে মুমিনরা অত্যন্ত ভালোবাসেন। মমিনদের যেন আত্মার সম্পর্ক মসজিদ এর সঙ্গে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে ব্যক্তির অন্তরে মসজিদের সঙ্গে ভালোবাসা থাকবে সে আরশের ছায়ায় স্থান পাবে।
মসজিদের প্রবেশ, মসজিদে বসে থাকা, মসজিদ থেকে বের হওয়ার কিছু আদব রয়েছে সেগুলো হলো-
- মসজিদে প্রবেশের সময় বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়া।
- তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর দরুদ পড়া।
- মসজিদের দোয়া পড়ে মসজিদে প্রবেশ করা।
- মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা।
- অজুসহ বা পাক পবিত্র অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। দুর্গন্ধময় কোন খাবার যেমন কাঁচা পেঁয়াজ ও কাঁচা রসুন খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না।
- মসজিদে প্রবেশ করার পর দুই রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় ছাড়া মসজিদে বসা উচিত নয়।
- মসজিদে ধীর স্থিরতার সঙ্গে গমন করতে হবে। মসজিদে দুনিয়াবী কোন গল্প বা কথা বলা যাবে না।
- জামাতের নামাজ আদায় করার সময় কাতার সোজা করে দাঁড়ানো ওয়াজিব।
- মসজিদে হারানো কোন জিনিস খোঁজা বা কোন ঘোষণা দেওয়া মসজিদে নিষিদ্ধ। তেমন কি মসজিদের মাইকে কারো মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা নিষেধ।
- মসজিদ সবসময় ধুয়ে মুছে পরিষ্কার ও পবিত্র রাখা উচিত।
মসজিদে বসে থাকার ফজিলত
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে উত্তম স্থান হচ্ছে মসজিদ। মানুষ যতক্ষণ মসজিদে অবস্থান করে ততক্ষণ সকল পাপ কাজ ও খারাপ কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকে। কোন ব্যক্তি যদি মসজিদে নামাজ ও জিকির আজগারে নিয়োজিত থাকে তার ফলে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে তার সম্পর্ক আরো বেশি জোরদার হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তার সকল উম্মতকে মসজিদে অবস্থান বা বসে থাকার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করতেন।
মসজিদে বসে থাকার ফজিলত সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি নামাজের জন্য মসজিদে অপেক্ষা করবে ওই ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত নামাজ আদায়রত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হবে।
আরেক হাদিসে মসজিদে বসে থাকার ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনায় এসেছে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন নামাজের স্থানে নামাজের জন্য যে ব্যক্তি অপেক্ষায় থাকে সে ততক্ষণ পর্যন্ত পুরো সময় নামাজের সোয়াব পেতে থাকে। তার অজু ছুটে না যাওয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তার জন্য দোয়া করতে থাকেন।
মসজিদে অবস্থান করা বা বসে থাকার ফলে নামাজের সওয়াব পাওয়া যায় অন্যদিকে ফেরেশতারা তার জন্য রহমত বর্ষণ ও ক্ষমাপ্রার্থনার দোয়া করেন। মহান আল্লাহ তায়ালা সকল ঈমানদারগণকে মসজিদে বসে থাকার বা নামাজের অপেক্ষায় থেকে তার রহমত লাভ এবং ফেরেশতাগণের মাগফেরাতের লাভ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখকের কথা মসজিদে দান করার ফজিলত মসজিদে প্রবেশ করার দোয়া ও বের হওয়ার দোয়া এছাড়াও মসজিদে নিষিদ্ধ সকল কাজ তুলে ধরা হয়েছে।। আশা করি মসজিদের দান করার ফজিলত এবং মসজিদের যেষব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা সকল বিষয় পড়ে তথ্যগুলো জেনে রাখলে আপনি বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url