নাটোরের ঐতিহ্য - নাটোরের দর্শনীয় স্থান
এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি নাটোর সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য , নাটোর কোথায় অবস্থিত , নাটোরের ঐতিহ্যবাহী স্থান, নাটোরের বিখ্যাত খাবার, নাটোর কেন বিখ্যাত নাটোরের সকল বিষয়ে জানতে পারবেন।
পুরো আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে নাটোর জেলাকে কেন নাটোর নামকরণ করা হয়েছে, হালতির বিল মিনি কক্সবাজার কোথায় অবস্থিত এবং চলন বিল সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ভূমিকা
নাটোর সম্পর্কে যা যা জানতে চান সব কিছু নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।নাটোরের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান কোনটি ,নাটোরের বিখ্যাত খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ।নাটোরকে কেন নাটোর নাম করন করা হয়েছে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে এই আরটিকেল এ তাই পুরো আরটিকেল টি ভাল ভাবে পরুন।
নাটোর কোথায় অবস্থিত
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম জেলা হচ্ছে নাটোর। রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত নাটোর জেলা। বাংলাদেশের আয়তনের দিক দিয়ে জেলার মধ্যে ৩৫ তম জেলা হচ্ছে নাটোর। নাটোর জেলার পশ্চিমে রয়েছে রাজশাহী জেলা, পূর্ব দিকে রয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা, উত্তর দিকে রয়েছে পাবনা জেলা এবং দক্ষিণ দিকে রয়েছে বগুড়া ও নওগাঁ জেলার অংশ বিশেষ।
বর্তমানে নাটোর জেলার আয়তন প্রায় ৩৯.৮৪ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে নাটোর জেলার জনসংখ্যা ১,৪৭,১৯ জন মাত্র।এই জেলায় যাতায়াতের ব্যবস্থা হচ্ছে শুধুমাত্র রেলপথ ও সড়ক পথ। নাটোর জেলায় কোন বিমানবন্দরের ব্যবস্থা নেই। এক সময় নৌপথের ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে তা আর নেই।বাংলাদেশে প্রাচীন শহরের মধ্যে অন্যতম শহর ছিল নাটোর।
বর্তমানে অন্যান্য শহরের তুলনায় নাটোর শহরের উন্নয়ন যাত্রা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। নাটোর শহরটি সমতল ভূমিতে অবস্থিত হওয়ার পরেও উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ঢালু রয়েছে। নাটোরের পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড ও ৩৩টি মহল্লা নিয়ে গঠিত হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত একজন কাউন্সিলর রয়েছে। মেয়র হচ্ছে পৌরসভার প্রধান।
নাটোর কিসের জন্য বিখ্যাত
নাটোর বিখ্যাত তিনটি জিনিষের নাম হলো-
- উত্তরা গনভবন
- চলনবিল
- কাচাগোল্লা
উত্তরা গনভবন- এটি নাটোর জেলার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান।
চলনবিল- বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল এটি, এই বিল এর জন্য নাটোর বিখ্যাত।
কাচাগোল্লা- নাটোরের বিখ্যাত খাবারের নাম হলো কাচাগোল্লা।
নাটোরের দর্শনীয় স্থান
নাটোর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু স্থান হচ্ছে -
- গ্রিন ভ্যালি পার্ক
- উত্তরা গণভবন
- হালতির বিল
- চলন বিল
- চলনবিল জাদুঘর
- নাটোর রাজবাড়ী
- নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল, নাটোর ইত্যাদি।
গ্রিন ভ্যালি পার্ক নাটোর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্রীন ভ্যালি পার্ক যা নাটোর জেলার লালপুর উপজেলায় অবস্থিত। লালপুর উপজেলা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গ্রিন ভ্যালি পার্ক। প্রায় ১২৫বিঘা জমির উপরে নির্মাণ করা হয়েছে এই পার্কটি। মনোরম সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে বিনোদনপ্রেমী মানুষের কাছে এটি এখন অন্যতম স্থান।
নাটোর জেলা ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় জমায় এই স্থানটিতে। বিনোদনের জন্য এই পার্কটিতে যা যা রয়েছে-
- সুইমিং পুল,
- বুলেট ট্রেন,
- মিনি ট্রেন,
- স্পিড বোট,
- প্যানেল বোট,
- নাগরদোলনা,
- থ্রিডি মুভি
- কেবল কার, ইত্যাদি।
এছাড়াও এই পার্কটির মধ্যে রয়েছে অন্যতম সুন্দর একটি লেক, যা প্রায় ৩০ বিঘা জমির উপরে বিস্তৃত রয়েছে। এই লেকের ওপর দুইটি দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ রয়েছে যা দর্শণার্থীদের নজর কারে। এই পার্কটি সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
উত্তরা গণভবন- নাটোর শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোর কথা যখন মাথায় আসে তখন সর্বপ্রথম মনে পড়ে উত্তরা গণভবনের কথা, উত্তরা গণভবন নাটোরের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান।নাটোর শহর থেকে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই উত্তরা গণভবন, যা নাটোর সদর থানায় অবস্থিত। বর্তমানে এটি উত্তরাঞ্চলের সরকারের বাসভবন নামে পরিচিত।
উত্তরা গণভবনটি রাজ বংশের একটি বড় ঐতিহ্য বহন করে।নাটোর দিঘাপতিয়ায় ১৯৭৪ সালে প্রায় 43 একর জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে এই ভবনটি। সর্বপ্রথম এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন দীঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা দয়ারাম রায়, এবং এর পরবর্তীতে পুনঃনির্মাণ ও সম্প্রসারণ করেন রাজবংশীয় ষষ্ঠ রাজা প্রমদানাথ। এই ভবনটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় ১১ বছর।
প্রমদানাথ নির্মিত মোট ছোট -বড় ১২ টি ভবন রয়েছে এই রাজবাড়িতে-
- প্রসাদ ভবন
- কুমার প্রসাদ
- রান্নাঘর
- প্রধান ফটক
- প্রধান কাচারী ভবন
- তিনকর্তা রানীবাড়ী
- স্টাফ কোয়াটার
- ড্রাইভার সেন্ট্রি ইত্যাদি।
প্রতিটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কারুকার্য দিয়ে।
হালতির বিল- নাটোর শহরের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে আরেকটি অন্যতম স্থান হচ্ছে নাটোরের হালতির বিল।নাটোর সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রবাহমান এই হালতির বিল। ছোট ছোট গ্রাম গুলি হালতির বিলের অন্যতম আকর্ষণ , যা দেখতে প্রায় ছোট ছোট দ্বীপের মত দেখা যায়। বর্তমানে এই বিলের মাঝখানে দর্শনের জন্য সুন্দর একটি মিনার তৈরি করা হয়েছে যা জিরো পয়েন্ট নামে পরিচিত।
এছাড়াও এই বিলের মধ্য দিয়ে একটি রাস্তা আছে যা দর্শনার্থীদের নজর কারে।হালতির বিল কে উত্তরাঞ্চলের মিনি কক্সবাজার নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কারণ এখানকার জলরাশি ঢেউ দ্বীপের মতো ছোট ছোট গ্রাম সৌন্দর্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ । বর্ষাকালে এই বিলের পানির গভীরতা প্রায় ৬ থেকে ৯ ফুট হয়ে থাকে।
বর্ষাকালে এই বিলের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায় এবং এই সময় অসংখ্য দর্শনার্থী এখানে ভ্রমণ করতে আসে।আত্রাই নদীর সাথে সংযুক্ত এই হালতির বিল। নাটোর সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত হয়েছে এই বিলটি যার মধ্যে ব্রক্ষপুর, খাজুরা, পিপরুল, ইউনিয়ন ইত্যাদি।
নাটোর জেলার নামকরণের ইতিহাস
নারোদ শব্দ থেকে এসেছে নাটোর নামটি, নারদ একটি নদী যা নাটোর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীর নামকরণ করা হয়েছিল নরোত্তম নামে এক পৌরাণিক ঋষির নামে। নাটোর জেলাটি মূলত একটি বিল ছিল যাকে বলা হয় ছাইভাঙ্গা। একজন জমিদার রামজীবন রায় ১৭০৬ সালে এই বিলটি ভরাট করে এখানে তার রাজধানী স্থাপন করেন।
রাজশাহী জেলার সদর দপ্তর ছিল নাটোর ১৭৬৯ থেকে ১৮২৫ সাল পর্যন্ত। সদর দপ্তর স্থানান্তরিত হয় রাজশাহীতে ১৮২৫ সালে এবং নাটোর রাজশাহী জেলার একটি মহকুমায় পরিণত হয়। নাটোরকে মহাকুমা ঘোষণা করা হয় ১৮৪৫ সালে। নাটোর শহরকে একটি পৌরসভায় পরিণত করা হয় ১৮৬৯ সালে। ১৮৮৪ সালে ১ শতাব্দীর ও বেশি সময় পরে নাটোর মহাকুমা স্বাধীন বাংলাদেশে একটি জেলায় পরিণত হয়।
লেখকের কথা
এই আরটিকেল এ আলচোনা করেছি বাংলাদেশ এর অন্যতম জেলা নাটোর কে নিয়ে। নাটোর সম্পর্কে বিস্তারিত পরে আপনার ভাল লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে সেয়ার করুন । অন্য কিছু সম্পর্কে জানতে চাইলে অব্যশই কমেন্ট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url